বেইজিং হাঁস পালনের সব থেকে সঠিক পদ্ধতি দেখুন।

2.7
(27)

বর্তমানে দিন দিনে পশু পাখি ও গৃহপালিত প্রাণী পালনের চাহিদা বাড়ছে। বেইজিং হাঁস একটি লাভজনক প্রাণী। বেইজিং জাতীয় হাঁস পালন করে অনেকেই সাবলম্বি হয়েছে। নতুন উদ্দ্যোক্তারা যেমন একদিকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে ঠিক অপরদিকে বেকার না থেকে বেইজিং হাস পালন করে আয় করতেছে। আজ আমি আপনাদের বেইজিং হাঁস পালনের সকল নিয়ম ও বেইজিং হাঁস পালন করে ব্যবসা করে লাভবান হওয়ার সকল খুটিনাটি বিষয় তুলে ধরব। চলুন বাকি অংশ মন দিয়ে পড়ে বেইজিং হাসের সব কিছু জানা যাক।

বেইজিং হাস কি?

বেইজিং হাঁস হলো চিনের এক প্রজাতির হাস, এই হাঁসের উৎপত্তিস্থল হলো চিনের বেইজিং শহরে। বেইজিং শহরের নাম অনুশারে এই হাঁসের নাম দেওয়া হয়েছে বেইজিং হাঁস। যদিও এই হাঁস প্রথমদিকে চিনের রাজধানী বেইজিং এ উৎপাদন করা হয়েছে তবে প্রাণী বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে পাওয়া যায় যে_ আমাদের দেশেও এই বেইজিং হাঁস পালন করা সম্ভব। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় খুব ভালভাবে এই হাঁস যত্নসহকারে পালন করা যাবে।

বেইজিং হাঁস দেখতে কেমন

বেইজিং হাঁস দেখতে কিছুটা সাধারন হাঁসের মতই। বেইজিং হাঁসের পায়ের রং হয় লালচে ও কিছুটা ধূসর হলুদ লালচে। এদের ঠোঁটের রং হয় হলুদ রং এর। আর গায়ের রং ধপধপে সাদা। দেখতে নাদুস নুদুস ও খাটো হয়।

বেইজিং হাঁস

বেইজিং হাঁসের বাসস্থান

বেইজিং জাতের হাঁস পালন করার জন্য প্রথমে আপনাকে বেইজিং হাঁসের বাসস্থল তৈরি করতে হবে। এই হাঁস পালনের কিছু ধারনা দিচ্ছিমাত্র। ধরুন আপনি ১০০ বেইজিং হাঁস পালন করবেন। এর জন্য আপনাকে বেশি জায়গার দরকার হবে না। আপনি এমন একটি জায়গা খুজুন যার সাথে পানি যেমন, নদী, ডোবা, নালা বা পুকুর থাকে। পানি ছাড়া বেইজিং জাতের হাস পালন করা সম্ভব নয়। আর ১০০ হাঁসের জন্য যায়গা থাকতে হবে ৩০০ স্কয়ার ফিট। বেইজিং হাঁস পারিবারিক ও বানিজ্যিক পালনের জন্য অনেকেই বাড়ির উঠানও ব্যবহার করে থাকে। অন্য সাধারন হাঁসের মতই বেইজিং হাঁস সব জায়গায় বিচরন করে। বলা বাহুল্য যে বেইজিং হাঁস অনেকেই শখ করেও পালন করে। আবার কেউ বানিজ্যিকভাবে লালন পালন করে। উইরোপ আমেরিকা সহ প্রায় সব দেশেই এই জাতের হাস পালন করা হয়।

বেইজিং হাঁসের বাচ্ছা ও পালন

প্রথমে আপনি যে কোন জায়গা থেকে বেইজিং হাঁসের বাচ্ছা কিনে লালনপালন করতে পারেন। বর্তমানে বেইজিং হাঁসের বাচ্ছা ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে ফোটানো হয়। তবে মনে রাখবেন যদি বাচ্ছা থেকে বেইজিং হাঁসের খামার দিতে চান তাহলে ১ মাস বয়সের বাচ্ছা দিয়ে শুরু করবেন। সচারচার দেশি হাঁসের মতই আপনি বেইজিং হাঁস পালন করতে পারেন। হাঁস পালনের জন্য আপনি ৩ ধরনের পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন।

আবদ্ধ পদ্ধতি

আপনি বেইজিং হাঁস পালন করার জন্য আবন্ধ পদ্ধতি গ্রহন করতে পারেন। আবদ্ধ পদ্ধতি হলো একটি হাঁসের ঘর করে সেটিতে হাঁস লালন পালন করতে পারেন।

আবদ্ধ ও আংশিক আবদ্ধ

আপনি আরেকটি পদ্ধতিতে হাঁস পালন করতে পারেন সেটি হল একটি ঘরের কাছে মাঠ বা পুকুরের সাথে সংযুক্ত করে বেইজিং হাঁস পালন করতে পারেন।

খোলা পদ্ধতিতে পালন

এবার আপনি একদম খোলা পদ্ধতিতে বেইজিং হাঁস পালন করতে পারেন। নদীতে, নালাতে, ডোবাতে বা পুকুরে। এ ধরনের পদ্ধতিকে প্রাকৃতিক পদ্ধতি বলা হয়।

আমি এই মহুর্তে বেইজিং হাঁস পালনের সকল উদ্দ্যোক্তাকে বলব যেহেতু বেইজিং হাঁস আমাদের দেশের আবহাওয়াতে পালন করা যায় তাই আমি বলব আমাদের দেশী হাঁস যেভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পালন করা হয়, এই হাঁসও সেই একই পদ্ধতিতে লালন পালন করলে লাভজনক হবে। কারণ হাঁস সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় পালন করলে ঐখান থেকে লাভ করা সম্ভব নয়।

কয়েকটি বেইজিং হাঁস

বেইজিং হাঁসের খাদ্য

বেইজিং হাঁসের খাদ্য তালিকা নিয়ে যদি বলা হয় তাহলে মুখস্থ বলার মতই। এই হাঁসের খাদ্য তালিকার মধ্যে সব থেকে ভাল হল শামুক, ঝিনুক, আগাছা, লতাপাতা, কচুরিপানা, শেওলা, কীটপতঙ্গ, মাঠে পড়ে থাকা ধান, ভাত ও চালের ভূসি ও অন্যন্য প্রাকৃতিক উদ্ভিদ। এগুলোই হাঁসের প্রধান খাদ্য সেটা বেইজিং হাঁস হোক অথবা দেশী হাঁস হোক।

বেইজিং হাঁসের রোগ

সব প্রাণীরেই বিভিন্নরকম রোগ বালাই হয় তেমনটিও বেইজিং হাঁসের মাঝেও রোগ ধরা দেয়। সাধারনত ২ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে বেইজিং হাঁস।

ডাকপ্লেগ রোগ

বেইজিং হাঁসের ডাকপ্লেগ রোগ হলে হাঁসের পা অবস ( প্যারালাইজড) হয়ে যায়। এর কারনে হাঁস খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। ঠিকমত হাটতে পারে না। এমনটি হলে আপনি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করুন।

ডাক কলেরা রোগ

ডাক কলেরা রোগ বেইজিং হাঁসের মাঝে হয়। এটা হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ বা কলেরা জাতীয় রোগ। এই রোগ হাঁসের হলে হাঁসের পায়খানা দুরগন্ধ হবে, পায়খানা পাতলা ও সবুজ বর্ণের হবে। হাঁসের পাখনা ঝুলে যাবে।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে হাঁস দ্রুত অসুস্থ হয়ে মরে যেতে পারে। যদিও মৃত্যের হার অনেক কম। আপনি হাঁসের চিকিৎসা নিবেন। আর চিকিৎসা করেও বেশি লাভ হবে না। কারন দেরি করে ফেলেছেন অনেক। তাই আপনাকে আগেই চিকিৎসা করা উচিৎ ছিল। আপনি হাসেঁর চিকিৎসার জন্য ভ্যাকসিন দিতে পারেন। হাঁসের বয়স যখন ২৫ দিন তখন আপনি আপনি প্রথম ভ্যাকসিন দিবেন। ২য় ভ্যাকসিন দিবেন ৪০ দিন পর। আর প্রতি ৪ মাস পর পর আপনাকে ডাকপ্লেগ রোগের টিকা দিতে হবে।

বেইজিং হাঁসের পাল

বেইজিং হাঁসের ব্যবসা করার পদ্ধতি

বর্তমানে মাংসের চাহিদা বাজারে প্রচুর আর হাসেঁর ডিমের চাহিদা তো আপনাদের বলাই লাগবে না। হাঁসের ডিমের চাহিদা বর্তমান বাজারে যে কত তা আপনি আগেই জানতে পেরেছে। আপনার বেইজিং হাসেঁর খামার থেকে আপনি মাংসের জন্য হাঁস বিক্রি করতে পারেন। বেইজিং হাঁসের বয়স ৪ মাস হলেই তা বাজারে বিক্রি করার জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়। আপনি বেইজিং জাতীয় হাঁস প্রতিপিছ ১৭০/- টাকা থেকে ২০০/- টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া আপনি বেইজিং হাঁসের ডিম বিক্রি করতে পারেন। প্রতিটি বেইজিং হাঁস ১২ থেকে ১৫ সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করে। ঠিকমত খাদ্য খেলে বেইজিং হাঁস ১২ মাসেই ডিম দেয়।

আজ পড়লেন বেইজিং হাঁস পালনের সকল তথ্য ও ব্যবসা করার পদ্ধতি। তাহলে আপনি বেইজিং হাঁস পালন করে একদিকে মাংস বিক্রি করে আয় করতে পারবেন অন্যদিকে হাঁসের ডিম বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। এ ছাড়া আপনার যদি দরকার পরে হাঁস পালনের সরকারি পরামর্শ বা ট্রেইনিং তাহলে আপনি আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার, নওগাঁ তে যোগাযোগ করতে পারেন। আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনার ভাল লেগেছে। যদি মনে করেন লেখা পড়ে অন্যরা উপকৃত হবে তাহলে শেয়ার করে দিতে পারেন। এছাড়া আপনার জন্য মন্তব্য করার কমেন্ট বক্স তো আছেই। আল্লাহ হাফেজ।।

লেখাটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে, অনুগ্রহ করে সে অনুযায়ী ভোট দিন

ভোট দিতে স্টার বাটনে চাপুন

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

লেখকের সমন্ধে জানুন

পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment