লাভজনক কাসাভা আলু চাষের সঠিক পদ্ধতি পুষ্টিগুন ও ব্যবসার সব কিছু জানুন।

4.5
(4)

কাসাভা (Cassava) হলো উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের  আলু জাতীয় ফসল। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে কাসাভা আলু চাষ করা হচ্ছে। পুষ্টিগুণ ও চাহিদা অনুযোগী কাসাভা আলুর চাষ করবেন অবশ্যই। কাসাভা আলু বিশ্বের প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশের মানুষের জন্য কাসাভা আলু তাদের জাতীয় খাদ্য। বর্তমানে ভারতে ও বাংলাদেশে ব্যাপকহারে এই কাসাভা আলু চাষ করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষেরা এই আলুকে আবার শিমুল আলু নামেও ডাকে তার কারন হল কাসাভা আলুর গাছ দেখতে অনেকটা শিমুল গাছের পাতার মত আর আলুর সাইজও শিমুল গাছের শিকরের মত। তাই শিমুল আলু নামে পরিচিত কাসাবা আলু গ্রামে চাষ করা হয়। আজ আপনাদের বলব কাসাভা আলু চাষের পদ্ধতি ও কাসাভা আলু চাষের সব আইডিয়া।

কাসাভা আলুর জাঁত

কাসাভা আলুর রয়েছে বিভিন্নরকম জাত। যখন একজন কৃষক কাসাবা আলু চাষ করার পরিকল্পনা গ্রহন করে তখনেই কাসাভা আলুর জাত নিয়ে ভাবতে হয়। কারন কেউ কাসাভা আলু চাষ করে ব্যবসা করার জন্য আবার কেউ চাষ করে বাড়ির খাবারের জন্য আবার কেউ মিষ্টি কাসাবা আলু চাষ করে। নিম্নে কিছু কাসাভা আলুর জাত ও বিভিন্ন দেশের আলুর জাতের নাম দেওয়া হল :

ভারতে ও বাংলাদেশে কাসাভার জনপ্রিয় হাইব্রিড জাতগুলো হলো M-4, H-97, H-165,H-226, H-1687, H-2304 I S-856।
ইন্দোনেশিয়ায় ADIRA-1,2,3,4
থাইল্যান্ডে RAYONG-1,2,3,60
ফিলিপাইনে PR-C 13,24,62 চীনে SC-201,205,124জাতগুলো জনপ্রিয় । নাইজেরিয়ায় TMS-3001,30572,50395,30555
এবং কলম্বিয়ায় M.Col.-2215,1684, M.BRA-5,12 জাতগুলো উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও আরও নিত্যনতুন আলুর জাত বের হচ্ছে।

কাসাভা আলুর পুষ্টিগুণ

কাসাভা আলুতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ, যেহেতু কাসাবা আলু মাঠির তলদেশে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদন হয় তাই কাসাবা আলুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদন। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ শর্করা, ১ থেকে ২ ভাগ রয়েছে প্রোটিন ও ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ রয়েছে জলীয় উপাদন। এছাড়া কাসাবা আলুর চেয়ে দ্বিগুণ পরিমান রয়েছে শর্করা যাহা আলুর চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টিগুন জোগান দেয়। যেখানে সাধারন আলু ১৮ ভাগ শর্করা ও ১৬.৩% স্টার্চ যোগান দেয় সেখানে কাসাভা আলু ৪০% শর্করা ও ৯০% স্টার্চ যোগান দেয়। আর কাসাভা আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্লুড ভাইবার ও ভিটামিন সি এর উপাদন। তাহলে বুঝতেই পারছেন কাসাভা আলুতে কত রকম পুষ্টিগুন রয়েছে।

মানুষের শরীরে কাসাভা আলুর উপকারিতা

আপনি উপরে পড়েছেন কাসাভা আলুর পুষ্টিগুন। তাহলে বুঝতেই পারছেন কাসাভা আলু মানুষের জন্য কত রোগ নিরাময় হিসেবে কাজ করে। কাসাভার একটি অংশ আঠালো থাকে যা আলুর থেকে রস বের হয় এই আঠালো অংশ ডায়াবেটিকস ও হৃদ রোগের জন্য কাজ করে । যাদের ডায়াবেটিক ও হৃদরোগ আছে তারা কাসাভা আলুর আঠালো খেতে পারেন। এছাড়া কাসাভা আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা আপনার শরীরের বাড়তি কোলেস্টরল দুর করে। এছাড়াও কাসাভা আলু ক্যান্সারজনিত সকল রোগের ঔষধ হিসবে কাজ করে ক্যান্সার দুর করে।

কাসাভা আলুর উৎপত্তির ইতিহাস

প্রায় সাত হাজার বছর আগে কাসাভা আলু চাষ করা হয়। সে সময়ে কলোম্বিয়া ও ভেনিজুয়েলায় কাসাবা আলুর প্রথম চাষ করার ইতিহাস জানা যায়। তাই সবাই ধরে নেয় দক্ষিণ আমেরিকায় কাসাভা আলুর প্রথম চাষ করা হয় এবং এটাই কাসাভা আলুর উৎপত্তি স্থল হিসেবে সিকৃত পায়। পনের শতকের সময় স্থানিয় কৃষক ও স্প্যানিশ বসতি স্থাপনকারীদদের দ্বারা মধ্য আমেরিকায় কাসাভা আলুর চাষাবাদ শুরু করা হয়। এরপর ১৬ শতকের শেষের দিকে পর্তুগিজদের দ্বারা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে কাসাভা আলু নিয়ে আসে এবং কাসাবা আলু চাষ শুরু করা হয় এরপর কাসাভা আলু চলে আসে এশিয়া মহাদেশে। স্প্যানিশরা এশিয়া মহাদেশে প্রথম কাসাভা আলু চাষ শুরু করে ফিলিপাইনে। এর পর ফিলিপাইন থেকে কাসাবা আলু এশিয়া মহাদেশের আরো বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পরে এবং চাষ করা হয়। আঠার শতকের শুরুতে পর্তুগিজদের হতে ভারতে কাসাভা আলুর আগমন হয় জানা যায় ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জনৈক খৃষ্টান মিশনারির মাধ্যমে কাসাভা আলু বাংলাদেশে চলে আসে এবং বাংলাদেশে প্রথম মধুপুর অঞ্চলে কাসাভা আলু চাষ করা হয়।

বিশ্বের কোন কোন দেশে কাসাভা আলু চাষ হয়

আপনি একটু আগে কাসাভা আলুর ইতিহাস পড়েছেন এখন পড়বেন বিশ্বের কোন কোন দেশে কাসাভা আলুর চাষ হয়। তার আগে বলে দেই বিশ্বব্যাপী কাসাভা আলুর চাহিদা এতো পরিমান যে কাসাভা আলুর মোট ৬০ ভাগ মানুষের খাদ্য হিসেবে সহায়ক ২৫ ভাগ গাবাদি পশুর খাদ্য সহায়ক আর বাকি ১৫ ভাগ স্টার্চ উৎপাদন হিসেবে ব্যবহার করা হয় । আফ্রিকার মানুষ খাদ্য হিসেবে তারা কাসাভা আলুকে প্রথম স্থানে নিয়ে এসেছে। তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাসাভা আলু চাই ই চাই। দক্ষিণ আমেরিকার মানুষেরা কাসাভা আলুকে খাদ্য ও পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। তাই আমেরিকায় কাসাভা আলুর চাষ অনেক বেশি হয়।
আফ্রিকা মহাদেশের তানজানিয়া, উগান্ডা, মোজাম্বিক, ঘানা ও যায়ারে প্রচুর পরিমানে কাসাবা আলু চাষ করা হয়। আফ্রিকার বেশিরভাগেই মানুষের খাদ্য হিসেবে কাসাভা আলুর চাষ করা হয়।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে চিন, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড এ প্রচুর পরিমানে কাসাভা আলুর চাষ করা হয়। এশিয়ায় চাষ করে তারা মানুষের খাদ্য ও বানিজ্যিক চাষ করে এছাড়া কাসাভা আলু থেকে তারা স্টার্চ কারখানা কাঁচামাল তৈরি করে।

কাসাভা আলুর চাষ পদ্ধতি

উপরে পড়লেন কাসাভা আলুর জন্ম ও ইতিহাস এখন পড়ুন কিভাবে কাসাভা আলু চাষ করা হয়। তা আরও নিচে ধাপে ধাপে দেওয়া হয়েছে। কাসাভা আলু সব থেকে ভাল ফলন দেয় উঞ্চ ও নাতিশীতঞ্চ অঞ্চলে। যদি কোন মাটিতে উর্বর না থাকে সেখানেও কাসাভা আলু চাষ করা যায়। পাহাড়ি অঞ্চলে ভাল চাষ পাওয়া হায় এছাড়া বালু মাটিতেও কাসাভা আলুর চাষ অনেক ভাল হয়। মোটকথা যেখানে অন্য কোন ফসল ফলানো যায় না সেখানেও কাসাভা আলুর চাষ করা যায়। তবে মনে রাখবেন জলবন্ধতা ও লবানক্ত জায়গায় কাসাভা আলুর চাষ একদম হয় না। আর কাসাবা আলু একটি খড়া শহনশীল ফসল। যেখানে ৬ মাস বেশ খড়া ও শুস্ক থাকে সেখানে কাসাভা আলুর চাষ হবে। সাধারনত ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এর নিচের আবহাওয়ায় কাসাভা আলুর ভাল চাষ হয় না। ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় কাসাভা আলুর ভাল ফলন পাএয়া যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৩০০ ফিট উপরেও চাষ করা যায়।

কাসাভা আলুর জমি তৈরি

কাসাভা আলুর জন্য সাধারনত জমি তৈরি করা লাগে না। আপনি চাসাভা আলুর জন্য সব থেকে ভাল জায়গা পাহাড়ী জায়গা বেচে নিতে পারেন। আর যদি বানিজ্যিক ভাবে চাষ করার পরিকল্পনা গ্রহন করেন তাহলে আপনি যে কোন ধরনের জমি বেচে নিতে পারেন। কাসাভা আলু চাষের জন্য মাটি কাটিং করে পিট তৈরি করতে হয়। এছাড়া সমান্তরাল জায়গাতেও করা যায় তবে কাসাভা আলুর কাটিং বা সেট তৈরি করে মাঠির পিট এ দিলে ফলন ভাল পাওয়া যায়। তাই আপনাকে সাজেশন দিতে পারি মাঠির পেট তৈরি করে কাসাভা আলু চাষ করুন।

কাসাভা আলুর গাছ লাগানোর নিয়ম ও সময়

কাসাভা আলুর গাছ লাগানোর নিয়ম অনেক ধরনের আছে। প্রতিহেক্টর জমিতে ১০ হাজার কাসাবা আলুর চাষ করা যায়। একটি গাছ থেকে অন্য গাছের দুরত্ব ৭০ সেমি থেকে ৯০ সেমি পর্যন্ত রাখতে হয়। যখন কাসাভা আলুর কাটিং রোপন করবেন তখন ২০ সেমি মাঠির নিচে ও ৫ সেমি মাটির নিচে দিবে। এর পর ১৫/২০ দিনের মধ্যেই রোপন করা কাটিং থেকে নতুন পাতা বের হবে। আর যদি নতুন পাতা বের না হয় তাহলে বুঝে নিবেন সেই কাটিং মরে গেছে। তাই আপনার সেখানে নতুন কাটিং রোপন করতে পারেন। কাসাভা আলু সারা বছরেই রোপন করা যায়। সাধারনত বর্ষা মৌসুমে রোপন করার জন্য উপযুক্ত সময়। আমাদের দেশে এপ্রিল ও মে মাসে কাসাভা আলু রোপনের সঠিক সময়।

কাসাভা আলুর বংশবিস্তার

 গাছ লাগানোর জন্য বীজ কিংবা কাটিং উভয়ই ব্যবহার করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য পরিপক্ব কাণ্ডের কাটিং ব্যবহার করা হয়। কাসাভা সংগ্রহের সময় সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত কাণ্ডগুলো কেটে পরবর্তী বছর লাগানোর জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হয়। লাগানোর সময় কা-কে ১৫-২০ সেমি করে কেটে সোজা করে লাগাতে হবে। প্রতিটি কাটিংয়ে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭টি নোড থাকতে হবে।

কাসাভার সার ব্যবস্থাপনা ও সেচ

কাসাভা আলু চাষের জন্য তেমন কোন সারের দরকার পরে না। প্রাকৃতিক সারেই কাসাবা আলুর জন্য যতেষ্ট তবে যদি কেউ বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করতে চান তাহলে প্রতিহেক্টর জমিতে ১৪০ থেকে ১৬০ কেজি পটাশিয়াম, ১৫ থেকে ২৫ কেজি ফসফরাস ও ১৮০ থেকে ২০০ কেজি নাইট্রোজেন প্রয়োগ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। আর কাসাভা আলুতে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পরে না। যদি বালু মাটি হয় তাহলে আপনি ৫ থেকে ১০ দিন পর পর সেচ দিতে পারেন। এতে মাটির আদ্রতা ঠিক থাকে ও ফলন ভাল হয়।

কাসাভা আলুর রোগবালাই ও পরিচর্যা

কাসাভা আলুতে তেমন ধরনের রোগবালাই হয় না। শুধুমাত্র লক্ষ রাখতে হবে আপনি যখন কাটিং লাগিয়েছেন তখন সেই কাটিং রোগ বালাইমুক্ত ছিল কিনা। আর কাসাভা আলুর গাছের বয়স ১ মাস হলে আপনি বাহ্যিক আগাছা পরিস্কার করে দিবেন এর সাথে গাছের গোড়ায় মাটি আলগা করে দিতে পারেন। এতে করে মাঠির উর্বরতা বাড়ে ও ফলন বৃদ্ধি পাওয়ার চাহিদাও থাকে বেশ। অনেক সময় কাসাভা গাছের পাতায় পোঁকা মাকর হানা দেয়। তাই আপনি পোঁকা-মাকরের ওষুধ ও স্প্রে দিয়ে তা নিরাময় করতে পারেন। এছাড়া কাসাভা আলুর শত্রু হলো ইঁদুর মাটির নিচে গর্ত করে ইঁদুর আলু খেয়ে ফেলে। আপনি বিভিন্ন উপায়ে তা নিধন করতে পারেন। ইঁদুর নিধনের জন্য আধুনিক পদ্ধতি ও আদিম পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন। বিষ দিয়েও মারতে পারেন অথবা ফাঁদ দিয়েও ইঁদুর মারতে পারেন।

কাসাভার সাথে অন্য ফসল চাষ করুন

আপনি যদি এমন একটি জমিতে কাসাভা আলু চাষ করেন যেখানে মাটি খুব উর্বর তাহলে আপনি কাসাভা আলুর সাথে আরও কিছু ফসল ফলাতে পারেন। বিভিন্ন দেশের মানুষ কাসাভা আলুর সাথে আরও কিছু ফসল চাষ করে থাকে আফ্রিকা ও ল্যটিন আমেরিকায় কাসাভা আলুর সাথে ৯০ ভাগ আন্তঃফসল চাষ করে তাদের জাতীয় ফলস ও শাক শবজি। ভারতে কাসাভা আলুর সাথে চাষ করে শিম, মোটর ডাল, পেঁয়াজ, চিনাবাদাম সহ নানা রকম শাক সবজি। মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড কাসাভা আলুর সাথে নারিকেল, পাম ওয়েল, রাবার বাগান সহ শাক-শবজি চাষাবাদ করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় কাসাভার সাথে ধান ও ভূট্টা চাষ করা হয় আর বাংলাদেশে কাসাভা আলুর সাথে ছাড়া কচু ও সরিষা আবাদ করা হয়। এসব আবাদের ফলে কোনরকম ক্ষতি হয় না। তবে আলুর গাছের ঘনত্ব কমিয়ে আনলে ভাল হয়।

কাসাবা আলুর ফলন ও বাজারজাত

কাসাভা আলুর ফলন তুলনামূলক অনেক বেশি হয় একটি গাছ থেকে ১৮ থেকে ২২ কেজি কাসাভা আলু ফলন দেয়। সাধারনত প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ টন কাসাভা আলু ফলন দেয়। তবে ভাল ফলন হলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫৫ থেকে ৬০ টন কাসাভা আলুর চাষ পাওয়া সম্ভব। সঠিক ভাবে চাষাবাদ করলে ও বাজারজাত করলে কাসাভা আলু দেশের অর্থনীতিতে ভাল প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যে বে-সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান কাসাভা আলু থেকে আটা ও স্টার্চ তৈরি করতেছে এবং বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই অবশ্যই বলা যেতে পারে কাসাভা চাষ করে ব্যবসা করলে ভাল আয় করা সম্ভব।

প্রক্রিয়াজাত ও আলু থেকে খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন

কাসাভা আলু একটি কৃষি ফসল তাই আপনি কাসাভা আলুর সঠিক প্রক্রিয়াজাত জানতে হবে । সঠিকভাবে আলু প্রক্রিয়াজাত করলে এই আলু থেকে প্রচুর পরিমানে আটা ও স্টার্চ উৎপাদন করা যায়। আপনি অন্য সাধারন আলুর মতই কাসাভা আলুকে প্রক্রিয়াজাত করতে পারবেন। প্রতিকেজি আলু থেকে আটা ও স্টার্চ মিলিয়ে ৩৪০ গ্রাম পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারবেন। এক হেক্টর জমি থেকে বছরে প্রায় ২৫.৫ মেট্রিকটন অর্থাৎ ৩ হাজার ৪০০ কেজি আটা ও স্টার্চ উৎপাদন করা সম্ভব। কাসাভা আলু থেকে যে সকল খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব তা হল। কাসাভার আটা থেকে রুটি, পাঁপর, চিপস, নুডুলস, ক্র্যাকার্স, কেক, বিস্কুট পাউরুটি সহ অন্য অন্য খাদ্য সামগ্রী তৈরি করা যায়। এছাড়া কাসাভা আলু সিদ্ধ করে খাওয়া যায় ও কাসাভা আলু অন্য আলুর মত তরকারি করে মাছ মাংসের সাথেও খাওয়া যায়।

বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে কাসাভা চাষ হয়

বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যক্তিগত ও বানিজ্যিকভাবে অনেক জায়গায় কাসাভা আলুর চাষ করা হয়। চট্রগ্রামের ফটিকছড়িতে বানিজ্যিকভাবে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে কাসাভা আলু চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে কুমিল্লার ময়নামতি অঞ্চল, মধুপুর গড়, গারো পাহারে কাসাভা আলু চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে চাষকৃত জাতগুলো থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে আমদানিকৃত এবং একবর্ষজীবী। এসব জায়গায় উৎপাদিত কাসাভা স্টার্চ উৎপাদনের জন্য কারখানায় ব্যবহৃত হয়। গাছপ্রতি ১৫-১৮ কেজি এবং একরপ্রতি ৬ টনের অধিক ফলন পাচ্ছে।

কাসাভার বাংলাদেশের সম্ভবনা

কাসাভা আলুর চাষে বাংলাদেশর রয়েছে বিরাট সম্ভবনা। আমাদের দেশে রয়েছে পরিত্যক্ত জায়গা যেখানে ফসল ফলানো যায় না। আপনি সেখানে কাসাভা আলু চাষ করতে পারেন। এছাড়া আমাদের দেশে রয়েছে পরিত্যক্ত অনেক টিলা ও পাহাড় আপনি সেখানে কাসাভা আলু চাষ করে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া মঙ্গা নিধনে ও কৃষকের উৎপাদন ও বানিজ্যিকভাবে চাষ করে কাসাভা আলু থেকে ভাল আয় করতে পারবেন। প্রতি বছর আমাদের দেশের ওষুধশিল্পসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানায় প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ ও সুক্রোজ প্রয়োজন হয়। তাই তারা স্টার্চের জন্য বাইরের দেশের সরাপন্ন হয়ে থাকে। আপনি যদি কাসাভা আলু চাষ করে স্টার্চ উৎপাদন করে তা দেশীয় শিল্পে দিয়ে দেন তাহলে দেশের সম্পদ দেশেই থাকতেছে ও আপনার আয় করার সুযোগ হচ্ছে।

শেষ কথা

আপনি এখন থেকে প্লান করে কাসাভা আলুর চাষ করতে পারেন। একদিকে যেমন কৃষিনির্ভর হচ্ছে দেশ অপরদিকে আপনার ভাল আয় হচ্ছে। আপনি বানিজ্যিকভাবে কাসাভা চাষ করলে খুব ভাল আয় করতে পারবেন। অ-ফলন ও পরিত্যক্ত জমি আপনি বছর ভিত্তিক লিজ নিয়ে কাসাভা আলু চাষ করতে পারেন। কাসাভা আলু চাষে বেশি পূঁজির দরকার হয় না। আর লাভও বেশি। আপনি কাসাভা আলু চাষের সব তথ্য পেতে পারেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে । তাহলে আজকের জন্য আল্লাহ হাফেজ।

লেখাটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে, অনুগ্রহ করে সে অনুযায়ী ভোট দিন

ভোট দিতে স্টার বাটনে চাপুন

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

লেখকের সমন্ধে জানুন

পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Comment